|
ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শাহজাহানের ঘর আলোকিত করে এলো ছেলে সন্তান
ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শাহজাহানের ঘর আলোকিত করে এলো ছেলে সন্তান
|
|
ভোলা প্রতিনিধি ::: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার নিউমার্কেটে গুলিতে নিহত শহীদ শাহজাহানের ঘর আলোকিত করে ফুটফুটে এক ছেলের জন্ম হয়েছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে শহীদ শাহজাহানের ছেলেকে দেখতে ফুল, ফল, পোশাক, মিষ্টি ও নগদ অর্থ নিয়ে ক্লিনিকে ছুটে আসেন ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান। এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ভোলা জেলা শহরের বেসরকারি ক্লিনিক এশিয়া মেডিকেল সেন্টারে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা ছেলের জন্ম দেন। ফাতেহা ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামের বাসিন্দা মৃত মো. ছাইফুল ও নবীসা দম্পতির মেয়ে। শাহজাহান মৃত্যুর আগে তার স্ত্রী ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানা গেছে। মো. ইমন আলী ও আয়েশা বেগম দম্পতির ছেলে শাহজাহান। নদী ভাঙনে সব হারিয়ে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন তারা। তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে। ফাতেহার অস্ত্রোপচার করেন ডা. আফরোজা বেগম ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট ডা. লুৎফুর রহমান। বর্তমানে মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শাহজাহানের ইচ্ছা অনুযায়ী তার ছেলের নাম রাখা হয়েছে ওমর ফারুক। ডা. আফরোজা বেগম বলেন, ছাত্র আন্দোলনে শহীদ শাহজাহানের ঘর আলোকিত করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক পুত্র সন্তান জন্ম নিয়েছে। আমরা নবজাতক ও মায়ের বিশেষ যত্ন করছি। শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বলেন, আমার স্বামী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আজ আমাদের পুত্র সন্তান হয়েছে, কিন্তু ছেলের মুখ দেখে যেতে পারলেন না আমার স্বামী। মৃত্যুর আগেই সন্তানের নাম রেখে গেছেন ওমর ফারুক। তার স্বপ্ন ছিলো ছেলেকে মাসরাসায় পড়াবেন। তার সেই ইচ্ছাও পূরণ হয়নি। সরকারের কাছে অনুরোধ, সরকার যেন শহীদ শাহজাহানের সন্তানের পাশে থাকে। ফাতেহার ভাই মো. সবুজ বলেন, শহীদ শাহজাহানের ছেলে সন্তান হয়েছে। আমরা খুশি হয়েও খুশি হতে পারিনি তার ভবিষ্যতের চিন্তায়। কারণ আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। শাহজাহান বেঁচে থাকলে তার সন্তানের ভবিষ্যৎ তিনিই গড়তেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভোলার সমন্বয়ক কামরুন নাহার এনি ও মো. রাহিম ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফ থেকে শহীদ শাহজাহানের সন্তান ওমর ফারুককে লালনপালন করে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করব। অনুদান দিচ্ছি, তার ভবিষ্যত নিশ্চিতে আগামীতেও দেওয়ার জন্য কাজ করব। শহীদ শাহজাহানের নবজাতক সন্তানকে দেখতে এসে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান বলেন, জুলাই-আগস্টে শহীদদের মধ্যে ভোলার ৪৬ জন রয়েছেন। এই ৪৬ জনের মধ্যে অন্যতম শহীদ শাহজাহান। শাহজাহানের স্ত্রী অসুস্থ থাকাকালীন আমি তার বাড়িতে গিয়েছি। খোঁজখবর নেওয়াসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও ভোলা জেলা প্রশাসন শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী-সন্তানের পাশে থাকবে। প্রসঙ্গত, শাহজাহান ঢাকা কলেজের সামনে নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে পাপোস বিক্রি করতেন। ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন শাহজাহান ও ফাতেহা। ফুটপাতে পাপোস বিক্রি করে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। গত ১৬ জুলাই নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে একটি বুলেট এসে লাগে শাহজাহানের নাকের ডান পাশে। শাহজাহান গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লে ছাত্ররা তাকে উদ্ধার ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর সরকারি খরচেই শাহজাহানকে ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। |