সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বরিশালের কীর্তনখোলা তীরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। দখিনের সংবাদ
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

বরিশালের কীর্তনখোলা তীরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। দখিনের সংবাদ
সংবাদটি শেয়ার করুন....

দখিনের সংবাদ ডেস্ক ।।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতায় বধ্যভূমি সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী শহররক্ষা বাঁধ দর্শনীয় স্থান হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মুক্তিযুদ্ধে বরিশাল জেলায় সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ড চালানো হয় যেখানে, ঐতিহাসিকভাবে দাড়িয়ে রয়েছে টর্চার সেলঠিক তার পাশেই এর অবস্থান।

ত্রিশ গোডাউন নামে সমধিক পরিচিতি পেলেও সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে রিভার ভিউ পার্ক ও বধ্যভূমি। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, চাঁনমারি সেতুও সমান জনপ্রিয়।

দর্শনার্থীরা বলছেন, কীর্তনখেলা তীরবর্তী শহররক্ষা বাঁধ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দরকার জেলা প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগ।

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বধ্যভূমি নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দু-এক বছরের মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। পহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শহররক্ষা বাঁধে চমৎকার মাত্রা পাবে।

সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত শহরক্ষা বাঁধের ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশে একই সাথে উপভোগ করা যায় নির্মল আকাশ আর নদীর কলতান। প্রতিদিন দুপুর গড়ালে জমতে শুরু করে মানুষের সমাগম। শহরের আভিজাত্যেপূর্ণ পার্কগুলোয় যেখানে বিশেষ দিবসে লোকারণ্য হয় ঠিক তার উল্টো চিত্র ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন বধ্যভূমি ও নদীর তীরে।

এখানে প্রায় সারা বছরই জমজমাট থাকে। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা অতঃপর রাত যত বাড়ে সেই আড্ডা ও জনসমাগম আরো বাড়ে। বিশেষ দিবসে পা ফেলার ফুরসত থাকে না। মূলত নাগরিক জীবনের জঞ্জাল থেকে ক্ষাণিকসময় অবকাশ নিতেই এই জনপ্রিয়তা।

দর্শনার্থীদের কাছে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় বিভিন্ন শ্রেণীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা ব্যবসা শুরু করেছেন। এর ওপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক পরিসঞ্চালনও সমৃদ্ধি এনে দিচ্ছে অনেক পরিবারে। সেইসাথে কুয়াকাটা, কক্সবাজারের মত কিছু দোকান গড়ে ওঠায় পর্যটন এলাকার স্বাদও উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা।

নগরীর একটি স্কুলের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, পুরো সপ্তাহে স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে পারি না। তারাও ঘরে থেকে রূদ্ধশ্বাস অনুভব করেন। এজন্য প্রায় প্রতি শুক্রবার বিকেলে ত্রিশ গোডাউন আসি। এখানে আসলে সন্তানরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

পরিবারসহ ঘুরতে আসা কামরুজ্জামান বলেন, স্থানটি খুবই সুন্দর। শহর রক্ষা বাঁধের ওপর বসে যেমন ফাস্টফুড খাওয়া যায় তেমনি বধ্যভ‚মি আর টার্চর সেলের ইতিহাসও পরের প্রজন্মকে বলা যায়। আমি মনে করি এই স্থান ঘিরে পরিকল্পনা করে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। এতে করে মানুষ যেমন ঘরের কাছে নির্মল পরিবেশে অবসর সময় কাটাতে পারে তেমনি ইতিহাস ঐতিহ্যের কাছাকাছি যেতে পারে।

ব্যবসায়ী রনি বলেন, নদীর তীরে বিভিন্ন শ্রেণীর কমপক্ষে একশ’ দোকান ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ফুচকা, চটপটি, সিঙ্গারা, মাছ-কাকড়ার ফ্রাইয়ের দোকান, শিশুদের খেলনার দোকান আর চা-কফির দোকানতো আছেই। এছাড়া কীর্তনখোলা নদীতে নৌকা ভ্রমণের জন্য বৈঠা চালানো আর ট্রলার ভাড়া পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেলে সব ব্যবসায়ীর বিক্রি বাড়ে।

আরেক দর্শনার্থী সালমা পারভিন নিঝুম বলেন, যেহেতু মানুষ স্বেচ্ছায় এই জায়গাটিকে ভালোবাসছে, প্রিয় ভাবছে এজন্য প্রশাসনের উচিত পুরো ত্রিশ গোডাউন এলাকাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের স্থাপনা ও সুযোগ সুবিধা বাড়ানো। এখানে চাঁদের রাতে একসাথে নদী, চাঁদ আর নির্মল আকাশ উপভোগ করা যায়। এমন সুযোগ বড় বড় পর্যটন কেন্দ্রে আছে বলে মনে হয় না।

ত্রিশ গোডাউন এলাকায় যেতে নথুল্লাবাদ, রূপাতলী, লঞ্চঘাট এলাকা বা শহরের অন্যকোন এলাকা থেকে রিকশাযোগে যেতে ৫০-৬০ টাকা ভাড়া লাগবে। থ্রি হুইলারে যেতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগবে। এছাড়া নৌকা ভ্রমন করলে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হবে। এখানে প্রবেশ ফি উন্মুক্ত।

এদিকে সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বিআইডব্লিটিএর জমিতে  ২০১১ সালের ২৬ মার্চ প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন স্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা পার্ক। নদীর তীরে মেরিন ওয়ার্কশপ এলাকায় সম্পূর্ণ পরিপাটি করে সাজানো গোছানো এ পার্কটি প্রাথমিকভাবে নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ৩ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্কটির উদ্বোধন করা হয়। এই পার্কটি প্রকৃতিপ্রেমীদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের সমাগম থাকে।

বীর প্রতীক মহিউদ্দিন মানিক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পার্কটির মর্যাদা অনন্য। তবে পার্কটিতে কিছু অপূর্ণতা রয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংশ্লিষ্ট কিছু ভাস্কর্য বা জাদুঘর থাকা জরুরী। একটি মুক্তমঞ্চ এবং কয়েকটি ছাতা তৈরি করার কথা ছিলো। কথা ছিলো সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। ভ্রমণকারীদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্ব। অথচ ইদানিং প্রায়ই অভিযোগ শুনছি পার্কে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে।

সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশ বলেন, বরিশালের নদী তীরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই শহর ও শহরের বাইরের মানুষের কাছে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন এলাকা খুব জনপ্রিয়। তবে এসব স্থানে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা, টয়লেট ব্যবস্থা ও বসার স্থান বসাতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি স্থাপনায় উন্মুক্ত সাহিত্য চর্চায় বাধা দেওয়া উচিত না। কিন্তু বরিশাল সিটি করপোরেশন সাহিত্য আড্ডা করতেও অনুমতি গ্রহনের বিধান রেখেছে। এতে নদী পাড় কেন্দ্রিক সাহিত্য আড্ডা কমে গেছে বরিশালে।

কবি হেনরী স্বপন বলেন, পর্যটন সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করতে হলে এসব এলাকায় ক্লাস টাইমে শিক্ষার্থীদের আড্ডা বন্ধ করতে হবে। অবাধে চলাচল করে নোংরা পরিবেশ তৈরী করে যারা তাদের বিচরণ বন্ধ করতে হবে। বখাটেদের উৎপাত বন্ধ করতে হবে। তাহলে নদী তীরের পর্যটন আরো স্থায়ী ও জনপ্রিয় হবে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ বলেন, ত্রিশ গোডাউন এলাকাটি ঐতিহাসিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের স্পর্শকাতর স্থান। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে সেখানকার টর্চারসেলে ইতিহাস তুলে ধরে সংস্কার করে দৃষ্টি নন্দন করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নদী তীর কেন্দ্রিক আরো অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হলে ঐতিহাসিকভাবে আরো গুরুত্ব বহন করবে পাশাপাশি মানুষ ঘুরতে এসে ইতিহাস জানতে পারবে। তাদের ভালো লাগবে।

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শহরের নদী তীর এলাকা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া নদী তীরবর্তী জায়গা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ইতিহাস সমুন্নত রেখে দর্শনীয় স্থাপনা গড়ে তুলতে।

 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

আমাদের ফেসবুক পেজ

সর্বাধিক পঠিত

প্রকাশক ও সম্পাদক : মুরাদ হোসাইন
মোবাইল : ০১৭৪৬৮৩৩০৪৮

ই-মেইল: dokhinersangbad@gmail.com
অফিস : ব্রাউন কম্পাউন্ড মসজিদ সংলগ্ন , বরিশাল ।

Design & Developed by
  সরবরাহ বাড়ায় বরিশালে দাম কমছে সবজির বাজারে। দখিনের সংবাদ   আজ মহান বিজয় দিবস, বিজয় নিশান ওড়ে বাংলার ঘরে ঘরে। দখিনের সংবাদ   উন্নয়নবিরোধীরা অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী। দখিনের সংবাদ   বরিশালে ঝেঁকে বসছে শীত, গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় । দখিনের সংবাদ