আজ মহান বিজয় দিবস, বিজয় নিশান ওড়ে বাংলার ঘরে ঘরে। দখিনের সংবাদ
|
নিজস্ব প্রতিবেদক ।। আজ বাঙালির চির আরাধ্য বিজয়ের দিন। আজ মহান বিজয় দিবস। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আসে এই দিন। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। রেসকোর্সের এক ঐতিহাসিক বিকাল।
প্রকিতিতে চকমকে বিকাল খেলা করছে। এই বিকালই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠে। যৌথবাহিনীর কাছে ৯৩ হাজার সেনা আত্মসমর্পণ করে। আর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে খুনি পাকিস্তানি বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। স্বাক্ষর করার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ের গৌরবগাথা যেন ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। চারদিকে আনন্দ আর আনন্দ। কব নজরুলের সেই কবিতার পঙ্ক্তিমালা, ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে/ মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে/ মোর টগবগিয়ে খুন হাসে।’ এই বিজয়ের গানের সুর যেন মায়ের মধুর হাসি হয়ে ধরা দেয়। বিজয় যেন শিশুর খিলখিল হাসি হয়ে দোল খায়। ধানের ক্ষেতে কৃষকের মুখে একচিলতে হাসি ফুটে ওঠে। গ্রামের দামাল কিশোর যেন পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে বিজয়ের অনাবিল আনন্দে মগ্ন হয়। বাঁধন ছাড়া গ্রামের হাঁস-মুরগি যেন ডানা ঝাপটে হাঁফ ছাড়ে। ৩০ লাখ শহিদের শোকসন্তাপ ছাপিয়ে বিজয় উল্লাস মাতিয়ে তোলে বাংলার প্রকৃতিকে। বিষাদ বিজয়ের সুরে একাকার হয়ে যায়। বিশ্ব মানচিত্রে পরাভব না মানা এক বিজয়ী জাতির আবির্ভাব ঘটে। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র বিজয় পতাকা উড্ডীন করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে যার যার অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। হান বিজয় দিবসে পৃথক বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে। এই হোক আমাদের বিজয়ের মাসে শপথ। বাঙালি জাতির জীবনে এক গৌরবময় অধ্যায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ। সব স্বাধীনচেতা বাঙালির কাছেই একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। এই অধ্যায় এক দিনে রচিত হয়নি। একাত্তরের বীজ বপন হয়েছিল বায়ান্নে। বায়ান্নর অমর একুশের পথ ধরে সেই বীজ অঙ্কুরিত হতে হতে প্রাণোদ্দীপ্ত প্রস্ফুটিত ফুল হয়ে ফোটে একাত্তরে। যে কারণে শিল্পী গেয়ে উঠেছিলেন, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’। ফুলকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই মরণপণ লড়াইয়ে নামে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে সিক্ত হয় বাংলার মাটি। কিন্তু বিজয়ের লক্ষ্য থেকে হটেনি বাংলার মানুষ। বিজয় ছিনিয়ে আনার পথ পরিক্রমা ছিল রক্তস্নাত ও কঠিন। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে কেউ পিছপা হয়নি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাঁর অমর ভাষণ জাতির চৈতন্যকে নাড়িয়ে দেয়। সেই থেকে ঘরে ঘরে বেজে ওঠে বিজয়ের গান। অজিত রায়ের ভরাট কণ্ঠে উদাত্ত সুরে-‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে ডিসেম্বর মাস জাতির জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এই মাসেই দেশকে মেধাশূন্য করতে খুনি পাকিস্তানি বাহিনী রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবী হত্যায় মেতে ওঠে। |